মাটি সংরক্ষণ কৌশল (৮.১.৫)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - আমাদের সম্পদ | NCTB BOOK
3.2k
Summary

মাটি সংরক্ষণ ও ক্ষয় প্রতিরোধের উপায়

মাটি একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ সব চাহিদা মাটির উপর নির্ভরশীল হলেও এটি বিভিন্ন কারণে ক্ষয় হতে থাকে। ঝোড়ো বাতাস, ভারী বৃষ্টিপাত, নদীর পানির স্রোত এবং বনভূমি কাটা মাটির ক্ষয়ে ভূমিকা রাখে।

মাটি সংরক্ষণে কার্যকর উপায়:

  • মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো, যা মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • জমিতে ফসল তোলার পর গোড়া উপড়ে না ফেলে রাখা।
  • ঢালু জায়গাগুলিতে ঘাস ও কলমি জাতীয় গাছ লাগিয়ে ক্ষয় প্রতিরোধ করা।
  • জৈব সার ব্যবহার করা, কারণ এটি মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ না করে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা।

নদী ভাঙন রোধে নদীর পাশে কলমি ও ধনচে গাছ লাগানো এবং ভাঙন প্রতিরোধে বালুর বস্তা বা কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করা উচিত।

বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে গবাদিপশু ঘাস খাওয়ানোর সময় যেন মাটির উপরে থাকা ঘাস সম্পূর্ণভাবে না খেয়ে ফেলে।


মাটি আমাদের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসাসহ অন্যান্য যে সকল চাহিদা রয়েছে, তার সবগুলোই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মাটির উপর নির্ভরশীল। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যকীয় এই সম্পদটি নানাভাবে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং এর উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ঝোড়ো বাতাস মাটি উড়িয়ে নেয়, ভারী বৃষ্টিপাত, নদীর পানির স্রোত বা নদীর ভাঙন ইত্যাদি নানা কারণে মাটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। মাটি ক্ষয় হলে এর উর্বরতা ধ্বংসের পাশাপাশি মাটিও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আমরা গাছপালা ও বনজঙল কেটে, পাহাড় কেটে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে (যেমন: ইটভাটা) প্রতিনিয়ত মাটির ক্ষয়সাধন করে চলেছি। তোমরা সবাই জান যে সাম্প্রতিক কালে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম এলাকায় অনেক প্রাণহানি ঘটছে, যার মূল কারণ পাহাড় কেটে মাটির ক্ষয়সাধন। এই ক্ষয় বন্ধ না হলে এটি আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।
ক্ষয়রোধ করে মাটি সংরক্ষণ
মাটি সংরক্ষণের সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ কৌশল হলো মাটিতে বেশি করে গাছ লাগানো। মাটিতে তৃণগুল্ম ও দূর্বা কিংবা অন্য যেকোনো ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ এবং অন্যান্য গাছপালা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাত ও মাটির ক্ষয়সাধন করতে পারে না। গাছের শিকড় মাটির ভিতরে থাকায় সেটি মাটিকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে এবং সরে যেতে দেয় না। জমিতে ফসল তোলার পর গোড়া উপড়ে না তুলে জমিতে রেখে দিলে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বাড়ে, অন্যদিকে তেমনি জমির ক্ষয়ও কমে যায়।বৃষ্টি হলে সাধারণত ঢালু জায়গায় মাটির ক্ষয় বেশি হয়। কাজেই ঢালু জায়গা দিয়ে যেন পানি প্রবাহিত না হতে পারে, তার ব্যবস্থা করা, তবে এই কাজ সবসময় খুব সহজ নয়। এরকম ক্ষেত্রে ঢালু জায়গায় ঘাস, ধনচে বা কলমিজাতীয় গাছ লাগিয়ে মাটির ক্ষয়রোধ করা যায়। গ্রাম এলাকায় অনেকেই ঘাস কেটে বা তুলে গবাদিপশুকে খাওয়ায়। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে ঘাস মাটি থেকে তুলে ফেললে সেটি মাটির ক্ষয়সাধন করে। তাই ঘাস কাটার সময় একেবারে মাটি ঘেঁষে কাটা উচিত নয়। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় গরু, ছাগল, ভেড়া—এগুলো মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয় ঘাস খাওয়ার জন্য। এরা যেন মাটির উপরে থাকা ঘাসের আচ্ছাদন সমূলে খেয়ে না ফেলে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। বনের গাছ কাটার ফলে অনেক সময় বিস্তীর্ণ এলাকা গাছশূন্য এবং অনাচ্ছাদিত হয়ে পড়ে। কাজেই নতুন গাছ লাগানোর ব্যবস্থা না করে বনের গাছ কখনোই কাটা ঠিক নয়। অন্যথায় কোনোভাবে মাটির ক্ষয়সাধন রোধ করা যাবে না।রাসায়নিক সারের পরিবর্তে যতটুকু সম্ভব জৈব সার ব্যবহার করা উচিত, কারণ জৈব সারে থাকা উপাদান ও হিউমাস পানি শোষণ করতে পারে। ফলে অল্প বৃষ্টিপাতে মাটির ক্ষয় হয় না। এছাড়া রাসায়নিক সার মাটিতে বসবাসকারী অনেক উপকারী পোকামাকড় অণুজীব ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে মাটির উর্বরতাও নষ্ট হয়ে যায়। একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ করলেও উর্বরতা নষ্ট হয়। তাই একই জমিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা উচিত।
নদীভাঙনের মাধ্যমে মাটির ক্ষয় বন্ধ করা
নদীর পাড়ে কলমি, ধনচে ইত্যাদি গাছ লাগানো যায়। নদী অত্যধিক খরস্রোতা হলে নদীর পাড়ে বালুর বস্তা ফেলে বা কংক্রিটের তৈরি ব্লক দিয়ে ভাঙন ঠেকানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না ।

 

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...